বায়ু (পাদ) জীবনেরই একটা অংশ। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতিদিন গড়ে ৬.৩ বিলিয়ন (ছয়শ ত্রিশ কোটি) বায়ু বাতাসে মেশে। অর্থাৎ জনগণ এই পরিমাণ হাওয়া একদিনে ছাড়ে। এ তো গেল শুধু আমেরিকার হিসাব। আমাদের দেশ ভারতের এই বিপুল সংখ্যক জনগণ কি পরিমাণ অবদান রাখেন সেই হিসেব আমাদের কাছে নেই, জানামতে হয়নি কোন শুমারি বা পরিসংখ্যান।
তবে এটা নিয়ে অনেকেই কথা বলতে চান না, লজ্জা পান বা কেউ কেউ এটা নিয়ে কথা বলাও অপরাধ মনে করেন। কিন্তু গবেষণা থেমে নেই। অনেক মজার এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে বায়ু নিয়ে নানানরকম গবেষণায়। নাক সিটকাচ্ছেন? আসলে সিটকানোর কিছু নেই। এটা শারীরিক একটা বিষয়। কোন অপরাধ নয়। তাই এ বিষয়ে অবাক করা কিছু তথ্য থাকছে আজকের লেখায়। শুধু তাই না। টিপস্ এর এই সাইটে টিপস্ হিসেবে থাকছে কিছু খাবারের নাম যেগুলো খেলে আপনার বায়ু হতে পারে ঘ্রাণ-গন্ধময়!
বায়ুর বাতাসটা মূলত উষ্ণ। শীতের সকালে উষ্ণ কিছু নিয়ে আলোচনা করাই যায়। তাই তুলে ধরছি বায়ু নিয়ে কিছু মজার তথ্য!
- বায়ু বা পাদের গন্ধ মূলত তিন রকমের হয়ে থাকে। বায়ুতে হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) গ্যাস থাকলে সেই বায়ুর গন্ধ হয় মারাত্মক, একেবারে পচা ডিমের মত। মেথানেথিওল (Methanethiol) যদি থাকে তাহলে যে গন্ধটা হয় সেটা অনেকটা পচে যাওয়া শাকসবজির মত। আর যদি বায়ুতে ডাইমিথাইল সালফাইড থাকে তাহলে হালকা পরিমাণে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ ছড়িয়ে পরে। আশা করি এই তিন রকমের সাথেই আমাদের পরিচয় আছে!
- গড়পড়তা একটা বায়ুর পরিমাণ হয় ১০০ মিলিলিটারের মত (০.১ লিটার)। এবং প্রায় দুই সেকেন্ডের মত স্থায়ী হয়। ভাবছেন বুঝি এগুলো মাপজোক করল কিভাবে? বিশেষভাবে তৈরি বায়ুনিরোধক একরকম আন্ডারওয়্যার তৈরি করা হয়েছিল যেগুলো গ্যাসকে ধরে রাখে। এরপর এই আন্ডারওয়্যারের ভেতর বায়ু সংগ্রহ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মোটেই সহজ কাজ না মনে হচ্ছে।
- নারীদের বায়ুতে বেশি গন্ধ। দুঃখিত বলছি সকল সম্মানিত নারী পাঠকের কাছে। তবে এটাই বলছে গবেষণা। আর তা ছাড়া গন্ধ হলেই বা কি! স্বাভাবিক বিষয় এটা! দেখুন বিখ্যাত বায়ু গবেষক মাইকেল লেভিট (Michael Levitt) কি আবিষ্কার করলেন। তিনি দেখালেন যে নারীদের বায়ুতে পুরুষদের বায়ুর থেকে তুলনামূলক বেশি পরিমাণে হাইড্রোজেন সালফাইড থাকে, অর্থাৎ সেই গ্যাস যেটা দুর্গন্ধ সৃষ্টির জন্য দায়ী।
- লাল মাংসে গন্ধ বাড়ে। সালফার তো গন্ধ তৈরি করে সেটা জানেন। কিন্তু আরও একটা উপাদান আছে যেটার নাম থিওলস্ (Thiols)। এটাও সালফার থেকেই তৈরি হয় এবং রসুন বা পচা ডিমের মত গন্ধ সরবরাহ করে। আগেই বলেছি মেথানেথিওলও বেশ কড়া। আর এটা থাকে মূলত রক্তে অর্থাৎ লাল মাংসে এদের উপস্থিতি অনেক বেশি। তাই এই মাংস হজম যখন হতে থাকে তখন সেই মেথানেথিওলও নির্গমন হতে থাকে। আর চারপাশের মানুষকে নাক ঢাকতে বাধ্য করে!
- বায়ু বা পাদ চেপে রাখলে মরে যাবার ভয় নেই। তবে এটা স্বাস্থ্যকর না মোটেই। অস্বস্তিও হবে একটা সময়ে। D-News বলছে, “যখন আপনি বায়ু চেপে রাখেন তখন গ্যাসটা বের হতে না পেরে আবার পেছনে ফিরে যায়। তারপর সেটা ইন্টেস্টিনাল (অন্ত্রের) ভেতরের দেওয়াল দ্বারা শোষিত হয়, পরিশেষে রক্তের সাথে মেশে। এতে বড়জোর পেট ফাঁপা, পেটে ব্যাথা বা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হতে পারে। তবে চেপে রাখাকে অভ্যাসে পরিণত করা যাবে না। কারণ এতে পেট ফাঁপা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।“
এবার দেখি কি করলে গন্ধমুক্ত হতে পারে আপনার বায়ু।
আমেরিকার বাজারে এখন ইন্টারনাল ডিওডোর্যান্ট পাওয়া যায়। এটা একটা ওষুধ। নাম DEVROM যেটা খেলে সালফারজনিত যে দুর্গন্ধ আছে সেটা চলে যাবে প্রায় ১০০ ভাগ। এই ওষুধে বিসমাথ দেওয়া থাকে। এটা একটা ধাতু এবং এর কাজ বেশ মজার। এটা একই সাথে বেশ ঘন এবং নন-টক্সিক, অর্থাৎ বিষাক্ত কিছু এতে নেই। সক্রিয় উপাদান বিসমাথ সাবগ্যালেট (Bismuth subgallate) দেওয়া এই ওষুধে, যতটুকু জানা গিয়েছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল এই ওষুধ খেলে মলের রঙ একটু কালচে হতে পারে অথবা জিহ্বার রঙ গাড় কালচে হতে পারে। তবে এই ওষুধ সেবনকারীরা বলেছেন যে বড় সুবিধার কথা ভেবে এটুকু কালচে রঙ মেনে নেওয়াই যায়।
মানুষের শরীর অনেক কিছু হজম করতে পারলেও নির্দিষ্ট একপ্রকার পলিস্যাকারাইড হজম করতে পারেনা। যখন এই শর্করাগুলো নিম্ন অন্ত্রে পৌঁছায়, তখন ব্যাকটেরিয়া ওগুলো খাওয়া শুরু করে। আর তাতেই প্রচুর পাদ (বায়ু) হয়। বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলো বায়ু তৈরিতে সহায়ক। যেমন, শিমের বীজ, ভুট্টা, গোল মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, দুধ, বেকারির রুটি, ডিম, বিয়ার, মসূর ডাল, পেঁয়াজ, রসূন, ওটস্, ঈস্ট, মূলা, মিষ্টি আলু, কাজুবাদাম ইত্যাদি।
বায়ু নিয়ে আরও কিছু মজার তথ্য
- গড়ে একজন মানুষ প্রতিদিন ১৪ বার বায়ু ত্যাগ করে
- অর্থাৎ প্রতিদিন আধা লিটার পরিমাণ
- বায়ুর গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৭ মাইল (১১ কিলোমিটার)
- বায়ু যখন তৈরি হয় তখন সেটার তাপমাত্রা থাকে ৯৮.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট
- বায়ুতে সাধারণত গন্ধ থাকেনা, কিন্তু যখন ব্যাকটেরিয়া যোগ হয় তখন যে গ্যাস তৈরি হয় তাতেই মূলত গন্ধ হয়।
- নীরব পাদ ঘাতক বেশি
- শিমের বীজ খেলে বায়ু বেশি হয়
- মৃতদেহ থেকেও বায়ু আসতে পারে
- নিরামিষাশীরা মাংসাশীদের থেকে বেশি বায়ু ছাড়েন
- বায়ুতে ৫৯% ই থাকে নাইট্রোজেন
বায়ু একটা বায়বীয় ও শারীরিক-প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ঠিক অন্যান্য প্রাকৃতিক কর্মের মতই।। তাই এটা স্বাভাবিকভাবেই নেওয়া উচিত।